নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশালের কাজিরহাট থানার আওতাধীন লতা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলো স্থানীয় মন্নান ও নুরু খা নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। দুদিন আগে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্থানীয় কাটাভঙ্গা এলাকার ওই বালু উত্তোলন বন্ধ করেন থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন। কিন্তু বিস্ময় হচ্ছে- বন্ধের একদিনের মাথায় রোববার থেকে পুনরায় বালু উত্তোলন করে মন্নান ও নুরু। খোদ পুলিশ সুপারের নির্দেশ উপেক্ষা করে বালু তোলার সাহস তারা কী ভাবে পেলেন এমন প্রশ্ন এখন উপজেলাজুড়ে ঘুরপাক খেলেও সংবাদকর্মীদের নানামুখী অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য-উপাত্ত্ব। থানার ওসি নিজেই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের সাথে সন্ধিচুক্তিতে গেলেন (!) ফলে উপরস্থ কর্মকর্তার নির্দেশ অকেটা নিরবেই উপেক্ষিত হয়ে যায়। নবাগত ওসি অবৈধ ব্যবসায় ভাগা বসিয়ে এসপির আদেশ উপেক্ষা করায় সুশীল সমাজের ক্ষোভের পাশাপাশি থানার অপরাপর পুলিশ সদস্যদের মাঝেও অসন্তোস দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়- নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণরুপে সরকারের বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও কাজিরহাটে মন্নান, নুরু খা ও নয়ন তা উপেক্ষা করে। এবং লতা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে পার্শ্ববর্তী হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার চালিয়ে বিক্রি করে আসছিল। করোনা দুর্যোগের কারণে ব্যবসায়ী নয়ন বালু উত্তোলন বন্ধ রাখলেও মন্নান ও নুরু স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চালিয়ে আসে। জানা গেছে- সদ্য বিদায়ী ওসিকে সে মাস অন্তর মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বাণিজ্য চালিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। গত সপ্তাহে থানায় ওসি হিসেবে সাজ্জাদ হোসেন যোগদান করলে মন্নান তাকে ম্যানেজেও সফল হয়।
কিন্তু এরই মধ্যে অবৈধভাবে করোনা দুর্যোগে উত্তোলনের ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি পুলিশ সুপারের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ক্ষুব্ধ পুলিশ সুপার অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণ নির্দেশ দিলে শনিবার তা বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়- এসপির নির্দেশে থানা পুলিশের একটি টিম শনিবার সরেজমিনে গিয়ে ড্রেজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও আজ রোববার থেকে ফের চালু হওয়া নিয়ে এলাকায় নানান কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে মন্নান ও নুরুর ক্ষমতার উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কে তাদের পুলিশ সুপারের নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস জুগিয়েছে। অনুসন্ধানে এর নেপথ্যে কোন শক্তিমানকে না পাওয়ায় অভিযোগের আঙ্গুল ওসির দিকেই উঠছে।
সূত্রগুলো জানায়- সাম্প্রতিকালে ওসির বিদায় অনুষ্ঠানে মন্নান ও নুরু থানায় গেলে সেখানেই নতুন ওসি সাজ্জদের সাথে তাদের পরিচয় ঘটে। এবং বালু উত্তোলন সংক্রান্তে সার্বিক লেনদেন নিয়েও তাদের মধ্যে আলাপচারিতা শেষে সন্ধিচুক্তি হয়। কিন্তু কয়েকদিন বাদে এনিয়ে স্থানীয়ভাবে কানাঘুষায় অবৈধ বাণিজ্য প্রকাশ পেলে সংবাদকর্মীরাও অবগত হন। এই বিষয়টি পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামকে অবহিত করলে মূলত তার নির্দেশেই শনিবার সকাল থেকে ড্রেজার বাণিজ্য বন্ধ করে থানা পুলিশ। কিন্তু একদিন না যেতেই রোববার সকাল থেকে ফের মন্নান ও নুরুর সেই বাণিজ্য চালু হয়ে গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়- শনিবার সকালে বালু উত্তোলন বন্ধ করলে মন্নান নানান ভাবে বিশেষ মহল থেকে ওসির কাছে সুপারিশ রাখে। এবং মন্নানের পক্ষ থেকে ওসির কাছে আসে আরও বড় অর্থনৈতিক প্রস্তাব। সব হিসেব মিলিয়ে ওসির গ্রীণ সিগনালে রোববার সকালে ড্রেজার মেশিন চালু করে মন্নান। মন্নানের কাছের একজন জানান, ওসির সাথে প্রথমের মাসে বিশ হাজার টাকার চুক্তি থাকলেও এসপির বন্ধ নির্দেশে তিনি বেকে বসেন। পরে অবশ্য অর্থ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে ওসি ড্রেজার চালু প্রসঙ্গে চেপে গিয়ে সুযোগ করে দেন। ওসি সাজ্জাদ হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও ড্রেজার ব্যবসায়ী মন্নান এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন। যার প্রমাণ হিসেবে একটি ভয়েস রেকডিং বরিশালটাইমসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সবশেষে এই বিষয়ে জানতে ব্যবসায়ী মন্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককেও অর্থনৈতিক প্রস্তাব দেন। এবং বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। কিন্তু অবৈধ ব্যবসার সাথে আপোসরফার সুযোগ কোথায় এমন প্রশ্নে রাখলে মন্নান মোবাইল সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে অবশ্য বরিশালটাইসের সাথে সমঝোতায় নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ড্রেজার ব্যবসায়ী ও পুলিশের এমন সখ্যতার খবর শুনে এবার বিস্মিত হলেন খোদ পুলিশ সুপারও। বরিশালটাইমসের এ প্রতিবেদককে বললেন বিষয়টিও আরও কাঠোরভাবে দেখছি।’
Leave a Reply